ভিডিও

ঈদের সামনে বগুড়ায় জালটাকা কারবারি চক্র সক্রিয়

বিশাল নেটওয়ার্ক, অধরা গডফাদার

প্রকাশিত: এপ্রিল ০২, ২০২৪, ১০:১১ রাত
আপডেট: এপ্রিল ০৩, ২০২৪, ১১:৪২ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

মাসুদুর রহমান রানা : ঈদের সামনে বগুড়ায় জাল টাকা কারবারি চক্র সক্রিয়। বগুড়াসহ সারাদেশে  রয়েছে এদের বিশাল নেটওয়ার্ক। মাঝে-মধ্যেই পুলিশের হাতে চক্রের সদস্যরা গ্রেফতারও হচ্ছে। গত ২৭ মার্চ  বগুড়ার সান্তাহারে ৭২ হাজার টাকার জালনোটসহ গ্রেফতার করা হয়েছে জাল টাকা কারবারি চক্রের সক্রিয় এক সদস্যকে।

ওই দিন বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে সান্তাহার পৌর শহরে স্টেশন রোডে একটি বিকাশের দোকানের সামনে থেকে জালটাকা কারবারি চক্রের সদস্য সাইফুল ইসলাম(৩৫)কে স্থানীয় জনতার সহযোগিতায় গ্রেফতার করে পুলিশ।

এ সময় তার কাছ থেকে ৫০টি এক হাজার, ৩৬টি ৫শ’ ও ২০টি ২০০ টাকার জালনোট উদ্ধার করা হয়। ধৃত সাইফুল ইসলাম লালমনিরহাট সদরের খোঁচাবাড়ি গ্রামের অলি আহমেদের ছেলে। তার বিরুদ্ধে মামলা করে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মামলার বাদি সান্তাহার পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো: বকুল হোসেন জানান, ধৃত সাইফুল স্বীকার করেছে যে,সান্তাহারে ঈদ বাজারে জালনোটগুলো ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে ছিল তার। জালনোটগুলো হাত বদলের মাধ্যমে তার সহযোগীদের কাছে সরবরাহের জন্য সেখানে সে অবস্থান করছিল। কিন্তু তার সহযোগীরা আসেনি।

তার আগেই পুলিশের কাছে ধরা পড়ে যায় সে। সে আরও তথ্য দেয় যে সে টাকার বাহক মাত্র। সে গডফাদারের চেনেনা। অনুসন্ধানে জানা যায়, জালটাকা কারবারি চক্রের বাহকরা ধরা পড়লেও অধরা থেকে যাচ্ছে পর্দার আড়ালে থাকা গড ফাদাররা। তাই বাহকরা ধরা পড়লেও জালটাকার কারবারে সমস্যা হচ্ছেনা। গডফাদাররা নতুন নতুন বাহককে মাঠে নামিয়ে দিয়ে কারবার চালিয়ে যাচ্ছে।

কয়েক হাত বদলের পর জাল টাকা বাহকের কাছে এসে পোঁছে। এরপর সেই জাল টাকা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে থাকে। এরপর খুচরা বিক্রেতারা জাল টাকা ঈদ মার্কেটে বা বাজারে কেনা-কাটার সময় ছড়িয়ে দেয়। কিন্তু জাল টাকার বাহক ধরা পড়লেও গডফাদারা ধরা পড়ে না। তারা পর্দার আড়ালেই থাকে। বাহকরা গডফাদারদের চেনেও না। পর্দার আড়াল থেকেই গডফাদাররা কলকাঠি নাড়ে।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্ত বলেন,বগুড়ায় বিভিন্ন সময় জালটাকাসহ ধরা পড়েছে এমন কয়েকজন তথ্য দিয়েছে যে, নানা কৌশলে বিভিন্ন স্থানে বাড়ি ভাড়া নিয়ে জাল টাকা ছাপিয়ে কারবার করে চক্রের সদস্যরা। প্রতি ১ লাখ টাকার জাল নোট তৈরিতে তাদের খরচ হয় ৫/৬ হাজার টাকা।

এসব জালনোট প্রস্তুতকারীরা চাহিদানুযায়ী প্রথম ধাপে এজেন্টদের মাধ্যমে পাইকারি দরে প্রতি লাখ জাল টাকা ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। এরপর দ্বিতীয় ধাপে মাঠ পর্যায়ে খুচরা দরে সেই জাল টাকা লাখ প্রতি বিক্রি করা হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায়।

প্রথম থেকে মাঠ পর্যায়ে ৩-৪ ধাপে হাত বদল হয়ে মার্কেট-বাজারে পৌঁছে যায়। এরপর এ চক্রের সাথে জড়িত নারী-পুরুষ ওইসব জাল টাকা দিয়ে ঈদ মার্কেটে নিত্যপণ্য কেনার মাধ্যমে বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছে।

এ দিকে, চক্রের সদস্যরা মাঝেমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও আইনের ফাঁক ফোকর গলিয়ে জামিনে জেল থেকে ছাড়া পায় চক্রের সদস্যরা। ছাড়া পেয়েই পুরনো এ পেশায় ফিরে যায় তারা। অল্প পুঁজিতে বহুগুণ লাভ থাকায় এ পেশা ছাড়ছে না জাল টাকার কারবারিরা।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশে ঈদ  ছাড়াও জাতীয় বড় কোন উৎসব এলে জাল টাকার কারবারিরা বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। অল্প পূঁজিতে বহুগুণ লাভ থাকায় জাল নোটের ব্যবসায় ঝুঁকে পড়ছে নারীসহ সাধারণ বেকার মানুষও।

চক্রের সদস্যরা পুলিশের গতিবিধি অনুসরণ করে নিরাপদ ও সুবিধাজনক স্থান নির্ধারণ করে নিরিবিল বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে এ ব্যবসা চালিয়ে আসছে। হাত বদল করে জাল টাকা বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে চক্রটি। এতে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন নিরীহ জনগণসহ পাইকারি-খুচরা ব্যবসায়ীরা।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদের ভিড়ে জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে মূলত জাল টাকা ব্যবহার করা হয়। জাল টাকা ও আসল টাকার মধ্যে পার্থক্য খুবই সামান্য। চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন শপিং মলে বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনার সময় জাল টাকা ব্যবহার করে। ফলে ভিড়ের মধ্যে বিক্রেতারা টাকা আসল না নকল তা বুঝে উঠার সুযোগ পায় না। এই সুযোগটিই জাল নোটের কারবারিরা কাজে লাগায়।

জালটাকার বাহকরা ধরা পড়লেও গডফাদাররা কেন ধরা পড়ছে না,এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিবি বগুড়ার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মো: মুস্তাফিজ হাসান বলেন, গডফাদারদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। তবে জালটাকার বাহকরা তাদের গডফাদারদের নাম বলেনা। জালটাকার কারবার চলে কয়েক হাত বদলের মাধ্যমে।

এ কারণে গডফাদারের নাগাল পর্যন্ত বাহকরা যেতে পারেনা। আবার বাহকদের কেউ কেউ গডফাদারদের চিনে ফেললেও তাদের ভুয়া মোবাইল ফোন বা ঠিকানা দেয়। পরে অনুসন্ধান করতে গেলে গডফাদার পরিচয় পাওয়া যায়না। তিনি বলেন, জালটাকা কারবারিদের ধরতে ডিবির অভিযান চলছে।

এ ব্যাপারে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল ও মিডিয়া) মো: শরাফত ইসলাম বলেন, ঈদের আগে জাল টাকার কারবারিরা সারাদেশেই সক্রিয় হয়ে ওঠে। বগুড়াও এর ব্যতিক্রম নয়। তিনি বলেন, বগুড়ায় জালটাকাসহ ধরা পড়ছে তারা বাহক মাত্র।

তবে গড ফাদারদের ধরতে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে বগুড়ায় জালটাকা কারবারি চক্রের কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের এই অভিযান চলমান রয়েছে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS